|
শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে
শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে স্থানীয়ভাবে নির্মিত যানবাহনগুলো গ্রামাঞ্চলে যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন যেমন সহজতর হয়েছে, খরচও কমেছে অনেক। তবে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন না হওয়ায় এ সব যানবাহন বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
দণি-পশ্চিমাঞ্চলের উত্তরাংশ বৃহত্তর যশোর ও বৃহত্তর কুষ্টিয়া মূলত নদী-খালবিহীন উঁচু ভূমি। ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব ও মনুষ্যসৃষ্ট অন্যান্য কারণে এখানকার নদী-খালগুলোর সিংহভাগই হয় মরে গেছে, অথবা মানচিত্রে স্থান নিয়েছে। এখন এ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন হয় মূলত সড়কপথে। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের শুরুতে এ অঞ্চলের রাস্তায় এক অভিনব যানবাহন চলাচল শুরু হয়। কৃষিকাজে ব্যবহৃত শ্যালো মেশিনের মোটরের সাহায্যে গ্রামাঞ্চলের উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন লোকেরা নির্মাণ করেন এক ধরনের যানবাহন। স্থানীয়ভাবে এগুলোকে বলা হয় নসিমন, করিমন ও আলমসাধু। নাম শুনেই বোঝা যায়, গ্রামবাংলার অতিসাধারণ মানুষ এগুলোর উদ্ভাবক।
উদ্ভাবনের পর এক যুগেরও বেশি সময় পার হয়েছে। এখন যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল শুধু নয়, সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে এই যানবাহন। যেহেতু সরকারি কোনো কর্তৃপ এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে না, সে কারণে ঠিক কত সংখ্যক নসিমন-করিমন রাস্তায় আছে তা জানা কারো প েসম্ভব নয়। তবে ধারণা করা হয়, শুধু যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের সড়ক-মহাসড়ক ও গ্রাম্য রাস্তায় চলাচল করে কয়েক লাখ নসিমন, করিমন, আলমসাধু। এ অঞ্চলের এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে নসিমন, করিমন দেখা যায় না। ফি বছর এ বহরে যোগ হচ্ছে আরো কয়েক হাজার করে। বিদেশ থেকে আমদানি করা বেবিট্যাঙ্,ি থ্রি-হুইলার বা মিশুকের স্থান গ্রামাঞ্চলে পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে স্থানীয়ভাবে নির্মিত যানবাহনগুলো। স্থানীয় প্রযুক্তি হওয়ায় এগুলোর দামও অনেক কম। স্বল্পবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবারের যে সব মানুষ এক সময় রিকশা, রিকশা-ভ্যান চালিয়ে বা তেখামারে মজুরি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো, তাদের অনেকেই এখন নসিমনচালক। কেউ নিজের গচ্ছিত টাকায়, কেউ জমি বা গরু-ছাগল বিক্রির টাকায়, আবার কেউ এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে করিমন-আলমসাধুর মালিক হয়েছে।
এসব যানবাহন স্থানীয় বিভিন্ন রুটে যাত্রী পরিবহন করে। সাধারণ মানুষ সস্তায় এতে চড়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে। যশোর শহর থেকে বাঘারপাড়া জনপ্রতি বাসভাড়া ১২ টাকা। আর নসিমনে ভাড়া ৭/৮ টাকা। এ কারণে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের কাছে নসিমন-করিমন জনপ্রিয়। অন্যদিকে, মালামাল পরিবহনেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে স্থানীয়ভাবে নির্মিত যানবাহনগুলো। গ্রামের তে থেকে সবজি বোঝাই করে নসিমন-আলমসাধু সরাসরি চলে আসে শহরের বাজারে। ধান-চাল থেকে শুরু করে সংসারের মালামাল পরিবহনেও এ যানবাহনগুলোর জুড়ি নেই। নসিমন, করিমন না থাকলে শহরের বাজারে সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম আরো বাড়তো বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। কিন্তু সমস্যা একটিই_ অনগ্রসর প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে এগুলো প্রায়ই দুর্ঘটনায় পতিত হয়। খোয়া যায় মানুষের জান-মাল।
নসিমন-করিমনগুলোকে রাস্তা থেকে প্রত্যাহারে বাস মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো বরাবরই সোচ্চার। প্রায়ই তারা এ ইসু্যতে ধর্মঘট ডাকে। তাদের যুক্তি, করিমন-আলমসাধুর ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। বাস মালিক-শ্রমিকদের আপত্তির কারণে এ অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার প্রশাসন বহুবার বৈঠকে বসেছেন। বৈঠকগুলোতে সিদ্ধান্ত হয়, হাইওয়েতে চলতে পারবে না স্থানীয়ভাবে নির্মিত যানবাহনগুলো। এমন সিদ্ধান্ত বার বার হলেও নসিমন-করিমন চালকরা তা থোড়াই কেয়ার করে। তাদের দাবি, যানবাহনগুলো হাইওয়েতে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত একতরফা। স্থানীয় সাধারণ মানুষ এগুলো উদ্ভাবন করলেও এর প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমিয়ে আনতে আজ পর্যন্তসরকারি কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। অথচ সরকারি সামান্য সহযোগিতা এগুলোর মান উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। সে েেত্র যানবাহন আমদানি বাবদ প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় করাও সম্ভব। #
|
|